শেরপুর ফোরাম

ঘাঘড়া_খান_বাড়ি_জামে_মসজিদের_ডান_পাশ

আমাদের প্রাণের শেরপুর

সমৃদ্ধির পথে এক অগ্রযাত্রার গল্প

ময়মনসিংহ বিভাগের প্রান্তে, গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারত–মেঘালয়ের সীমানা ছুঁয়ে দাঁড়ানো শেরপুর—সবুজ অরণ্য, পাহাড়ি ঢাল আর নদীঘেরা এক প্রাণের জনপদ। আয়তন প্রায় ১,৩৬৪.৬৭ বর্গ কিমি, জনসংখ্যা প্রায় ১৫.০২–১৫.৫২ লাখ (২০২২); জেলা সদরসহ ৫টি উপজেলা—শেরপুর সদর, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, নকলা, শ্রীবরদী। পৌরসভা/মিউনিসিপ্যালিটির সংখ্যা ৪–৫ (তথ্যসূত্রভেদে), এবং ইউনিয়ন ৫২-এর বেশি—এই প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতরেই শেরপুরের প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে আছে কৃষি, সংস্কৃতি আর পর্যটনের উচ্ছ্বাস। শেরপুরের ভূপ্রকৃতি ও নদ-নদী তার প্রাণশক্তি—পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, কংস/ভোগাই, মহারশি, মালিজা, মৃগী প্রভৃতি নদী জলজ সম্পদ, চরাঞ্চল আর নাব্যতার এক জীবন্ত চিত্র এঁকে রেখেছে। সীমান্তঘেঁষা মধুটিলা ইকো পার্ক (নালিতাবাড়ী) ও গজনী অবকাশ কেন্দ্র (ঝিনাইগাতী) শেরপুরকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইকো-ট্যুরিজম স্পটে পরিণত করেছে—মধুটিলার আনুমানিক ৩৮০ একর বনভূমিতে জীববৈচিত্র্য আর পাহাড়ি দৃশ্যের অনবদ্য মেলবন্ধন। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-অবকাঠামোও এগোচ্ছে—জেলায় ১টি জেলা সদর হাসপাতাল, ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র রয়েছে; শহরাঞ্চলে শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে উঁচু (শেরপুর পৌর এলাকায় ২০২২-এ প্রায় ৭৯% সাক্ষরতা দেখা যায়)। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি—ধান, পাট, গম, আলু, সরিষা, ভুট্টা ও সবজি চাষের পাশাপাশি চরভিত্তিক চাষাবাদ ও প্রাণিসম্পদ শেরপুরের আয়ের প্রধান ভরকেন্দ্র। শেরপুর, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরা একটি জেলা, যেখানে গারো পাহাড়ের সবুজ আর ব্রহ্মপুত্রের পলিমাটি এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। এখানে মানুষের পরিশ্রম, উদ্যোগ আর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এই জেলাকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ফোরামের এই অগ্রযাত্রার মূল ভিত্তি হলো একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য—এক সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর শেরপুর গড়া।

আমাদের বর্তমান শেরপুর

সম্ভাবনার উন্মুক্ত ভুবন, চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের পথ

শেরপুর, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক সবুজ জনপদ, যেখানে গারো পাহাড়ের ঢেউ খেলানো প্রকৃতি আর সমতলের উর্বর মাটি এক অপার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। ধান, পাট, ভুট্টা আর সবজির প্রাচুর্য এই জেলাকে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করেছে। কিন্তু এই অপার সম্ভাবনার আড়ালে লুকিয়ে আছে কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জ, যা শেরপুরের অগ্রগতিকে বারবার বাধাগ্রস্ত করে। শেরপুরের গারো পাহাড় সংলগ্ন ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় পাহাড়ি ঢল এবং আকস্মিক বন্যা (ফ্ল্যাশ ফ্লাড) এক বড় সমস্যা। প্রতি বছর বর্ষায় এই এলাকার শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়, যা ফসল, ঘরবাড়ি এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শুধু বন্যা নয়, নদীভাঙনও হাজারো মানুষকে গৃহহীন করে এবং জীবিকার ওপর চরম আঘাত হানে। দারিদ্র্য ও মানব উন্নয়ন সূচকে (HDI) শেরপুর এখনো দেশের নিম্নমধ্য পর্যায়ে রয়েছে। প্রধানত কৃষিনির্ভর হওয়ায় এবং শিল্পায়নের অভাবের কারণে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। এর ফলে গ্রামীণ দারিদ্র্য এবং মৌসুমি বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে শেরপুরে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। বিশেষ করে দুর্গম সীমান্ত এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মানসম্মত সেবা, পর্যাপ্ত জনবল এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব প্রকট। এর ফলে সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা পেতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। শিক্ষার ক্ষেত্রেও বৈষম্য চোখে পড়ার মতো। শহরের সাক্ষরতার হার ভালো হলেও গ্রাম, চর এবং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত অঞ্চলগুলোতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেশি। এর কারণ হিসেবে স্কুলের অবকাঠামোর দুর্বলতা, শিক্ষকের অভাব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ঝুঁকিকে চিহ্নিত করা যায়। নদী ও চরাঞ্চলের কাঁচা রাস্তা, দুর্বল বাঁধ এবং অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বর্ষাকালে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে কৃষিপণ্য বাজারে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এই দুর্বল অবকাঠামো স্থানীয় শিল্প বিকাশেও বাধা সৃষ্টি করছে।

আমাদের বর্তমান শেরপুর

ঐক্যের শক্তিতে জেগে উঠুক সমৃদ্ধির শেরপুর

আমরা এমন একটি শেরপুররে স্বপ্ন দেখি, যা নিরক্ষরতা, কর্মহীনতা, দারিদ্র্য, গৃহহীনতা এবং চিকিৎসার অভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আমাদের স্বপ্নের শেরপুর আমরা একটি নতুন শেরপুর গড়তে চাই, যেখানে রয়েছে:

শিক্ষিত ও দক্ষ শেরপুর

আমাদের স্বপ্ন একটি এমন শেরপুর, যেখানে প্রতিটি নাগরিক শুধু শিক্ষিতই নয়, বরং দক্ষ এবং প্রযুক্তিতে পারদর্শী। আমরা বিশ্বাস করি, ডিজিটাল দক্ষতা ছাড়া আধুনিক বিশ্বে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য, শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং নিজেদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।

কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নের নতুন দিগন্ত

আমরা পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান এবং সমৃদ্ধ শিল্প খাতের মাধ্যমে শেরপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই। শুধু কৃষিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটাতে চাই, যা স্থানীয় যুবকদের জন্য নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করবে। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও মজবুত হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন

শেরপুরের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বন্যা, পাহাড়ি ঢল এবং নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নিয়মিত সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবিলায় আমরা সুশৃঙ্খল প্রস্তুতি এবং কার্যকর পুনর্বাসন ব্যবস্থার ওপর জোর দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য, দুর্যোগের ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দ্রুত দাঁড়ানো।

পর্যটন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা

শেরপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে আমরা পর্যটন খাতকে নতুন করে সাজাতে চাই। মধুটিলা, গজনীসহ গারো পাহাড়ের পাদদেশের মনোরম স্থানগুলোকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটানো সম্ভব। এর পাশাপাশি আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন পর্যটকদের আগমন বাড়াতে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে।

সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা

একটি সুস্থ জাতিই পারে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে। তাই আমরা সবার জন্য সহজলভ্য এবং সুরক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় মানসম্মত চিকিৎসা পৌঁছানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ সমাজ গড়তে চাই।

🧑🏻‍🌾

কৃষি ও অর্থনীতির আধুনিকায়ন

শেরপুরের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। তাই আমরা কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উন্নয়ন এবং বাজার অর্থনীতির সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি সংযোগ স্থাপনে কাজ করছি। এতে করে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।

🛥️

শেরপুরের চরাঞ্চলের উন্নয়ন

শেরপুরের চরাঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হলেও এখানকার জীবনযাত্রা বেশ চ্যালেঞ্জিং। উঁচু করে পাকা সড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং নৌপথে নিরাপদ যোগাযোগ নিশ্চিত করা।আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন করে কৃষিকে বাণিজ্যিক করা। নতুন স্কুল ও ক্লিনিক স্থাপন করা। কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্প ও খামার স্থাপনে সহায়তা দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। বাঁধ নির্মাণ ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে নদীভাঙন ও বন্যা মোকাবিলা করা। এতে করে মানুষ সাফল্যের মুখ দেখবে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও সুশাসন

আমাদের উন্নয়নের ধারা যেন প্রতিটি গ্রাম এবং প্রতিটি মানুষকে স্পর্শ করে, সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বিশ্বাসী। একইসঙ্গে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা এমন একটি স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবে।

আমাদের গর্ব আমাদের প্রাণের শেরপুর, ঐক্য, ইনসাফের ভিত্তিতে সমৃদ্ধ শেরপুর আমরাই গড়বো।